পরিচ্ছেদ ৩.২ : বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের সময় নির্ণয় পদ্ধতি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল | | NCTB BOOK
137
137

পৃথিবীর মানচিত্রে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য পূর্ব-পশ্চিমে এবং উত্তর-দক্ষিণে কতকগুলো কাল্পনিক রেখা অঙ্কন করা হয়। এগুলোকে যথাক্রমে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা বলে। কোনো স্থানের অবস্থান অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে জানা যায়। দ্রাঘিমার অবস্থান থেকে কোনো স্থানের সময় জানা যায়। অক্ষরেখার সাহায্যে যেমন নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে অবস্থান জানা যায়, তেমনি মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে অবস্থান জানার জন্য মধ্যরেখা বা দ্রাঘিমারেখা ব্যবহার করা হয়। ভূপৃষ্ঠকে সমতল মনে হলেও পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে অভিগত গোলক। তাই পৃথিবী গোলাকার বলে মূল মধ্যরেখা থেকে দূরত্ব কৌণিক মাপে প্রকাশ করা সুবিধাজনক।

অক্ষ, অক্ষরেখা, নিরক্ষরেখা, দ্রাঘিমারেখা, মূল মধ্যরেখা
অক্ষ, অক্ষরেখা ও নিরক্ষরেখা : পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে কল্পিত রেখাকে অক্ষ (Axis) বলে। এ অক্ষের উত্তর-প্রান্ত বিন্দুকে উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ-প্রান্ত বিন্দুকে দক্ষিণ মেরু বলা হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য পূর্ব-পশ্চিমে যে কতকগুলো কাল্পনিক রেখা অঙ্কন করা হয় তাকে অক্ষরেখা বলে। দুই মেরু থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে বলা হয় নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা। পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির জন্য এ রেখা বৃত্তাকার, তাই এ রেখাকে নিরক্ষবৃত্তও বলা হয়। নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকের পৃথিবীর অর্ধেককে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ দিকের অর্ধেককে দক্ষিণ গোলার্ধ বলা হয়। নিরক্ষরেখার সাহায্যে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।

   পৃথিবীর বৃত্তের মোট পরিধি হলো ৩৬০°। এই পরিধির কোণকে ডিগ্রি (º), মিনিট (´ ) ও সেকেণ্ডে ( ” ) বিভক্ত করা হয়। নিরক্ষরেখা থেকে প্রত্যেক মেরুর কৌণিক দূরত্ব ৯০°। অক্ষরেখাগুলো পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত এবং পরস্পর সমান্তরাল। এ কারণে প্রত্যেকটি অক্ষরেখাকে সমাক্ষরেখাও বলা হয়। প্রত্যেক অক্ষরেখা একটি পূর্ণবৃত্ত । বিখ্যাত অক্ষরেখা হলো : ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ বা কর্কটক্রান্তি, ২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ বা মকরক্রান্তি, ৬৬.৫° উত্তর অক্ষাংশ বা সুমেরুবৃত্ত এবং ৬৬.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ বা কুমেরুবৃত্ত। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে ঐ স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। সর্বোচ্চ অক্ষাংশ ৯০°। কোনো স্থানের অবস্থান জানার জন্য স্থানটি নিরক্ষরেখার কত উত্তরে বা দক্ষিণে এবং মূল মধ্যরেখার কত পূর্বে বা পশ্চিমে তা জানা প্রয়োজন। একই অক্ষরেখায় অবস্থিত সকল স্থানের অক্ষাংশ এক।

০° থেকে ৩০° পর্যন্ত অক্ষাংশকে নিম্ন অক্ষাংশ, ৩০° থেকে ৬০০ পর্যন্ত অক্ষাংশকে মধ্য অক্ষাংশ এবং ৬০° থেকে ৯০° পর্যন্ত অক্ষাংশকে উচ্চ অক্ষাংশ বলে। 

দ্রাঘিমারেখা (Meridians of Longitude)
নিরক্ষরেখাকে ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ডে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগের উপর দিয়ে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত যে রেখাগুলো কল্পনা করা হয়েছে তাকে দ্রাঘিমারেখা বলে। দ্রাঘিমারেখাকে মধ্যরেখাও বলা হয়। দ্রাঘিমারেখাগুলো অর্ধবৃত্ত এবং সমান্তরাল নয়। প্রত্যেকটি দ্রাঘিমারেখার দৈর্ঘ্য সমান। সর্বোচ্চ দ্রাঘিমা ১৮০° হয়। মধ্যরেখাগুলোর যে কোনো একটিকে নির্দিষ্ট মধ্যরেখা ধরে এ রেখা থেকে অন্যান্য মধ্যরেখার কৌণিক দূরত্ব মাপা হয়। দ্রাঘিমার সাহায্যে স্থানীয় সময় নির্ণয় করা যায়।   

মূল মধ্যরেখা (Prime Meridian)
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের উপকণ্ঠে গ্রিনিচ (Greenwich) মান মন্দিরের উপর দিয়ে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত যে মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে তাকে মূল মধ্যরেখা বলে। এই রেখার মান ০ ডিগ্রি ধরা হয়েছে। মূল মধ্যরেখা থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের সাহায্যে অপরাপর দ্রাঘিমারেখাগুলো অক্ষম করা যায়। গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখা থেকে ৪৫ ডিগ্রি পূর্বে যে মধ্যরেখা বা দ্রাঘিমারেখা তার উপর সকল স্থানের দ্রাঘিমা ৪৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা। সুতরাং আমরা কাজে পারি যে, গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে যে কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সেই স্থানের দ্রাঘিমা বলা হয়। আমরা পারও জানি, গ্রিনিচের প্রঘিমা ডিগ্রি। পৃথিবীর পরিধি যারা উৎপন্ন কোণ ৩৮০ ডিগ্রি। মূল মধ্যরেখা এই ৩৬০ ডিগ্রিকে ১ ডিগ্রি লস্কর অন্তর সমান দুই ভাগে অর্থাৎ ১৮০ ডিগ্রি পূর্ব ও ১৮০ ডিগ্রি পশ্চিমে ভাগ করেছে। পৃথিবী গোলাকার বলে ১৮০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা ও ১৮০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমা মূলত একই মধ্যরেখায় পড়ে। অক্ষাংশের ন্যায় দ্রাঘিমাকেও মিনিট ও সেকেন্ডে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি মিনিট দ্রাঘিমা এক ডিগ্রির ষাট ভাগের এক ভাগের সমান। যেখানে নিরক্ষরেখা * মূল মধ্যরেখা পরস্পরকে লম্বভাবে ছেল করে সেখানে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা উভয়ই শূন্য (০) ডিগ্রি। পার এ স্থানটি হলো গিনি উপসাগরের কোনো একটি স্থান। স্থানীয় সময় এবং গ্রিনিচের সময় থেকে কোনো স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়।

কাজ-এককঃ গুরুত্বপূর্ণ কাল্পনিক রেখাগুলোর অবস্থান (ডিগ্রিতে ০) ছকে লিপিবদ্ধ কর।

  স্থানীয় সময়ের পার্থক্য : পৃথিবী গোলাকার এবং নিজ অক্ষ বা মেরুরেখার চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অনরক্ষ আবর্তন করছে। ফলে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থান ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূর্যের সামনে উপস্থিত হয়। যে সময়ে কোনো স্থানের মধ্যরেখা সূর্যের ঠিক সামনে আসে অর্থাৎ ঐ স্থানে সূর্যকে ঠিক মাথার উপর দেখা যায়, তখন ঐ স্থানে মধ্যাহ্ন হয়। তখন ঘড়িতে বেলা ১২টা যাচ্ছে। মধ্যাহ্ন অনুসারে দিনের অন্যান্য সময় নির্ধারণ করা হয়। ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সমরের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট এবং ১ দ্রাঘিমার ব্যবধানে সমরের পার্থক্য হয় ৪ সেকেন্ড। কোনো স্থান বা অঞ্চলে যখন বেলা ১২টা তখন সে স্থান থেকে ৫ ডিগ্রি পূর্বে অবস্থিত স্থানের সময় হবে ১২টা + (Ex ৪) মিনিট বা ১২ ঘন্টা ২০ মিনিট। একই স্থান থেকে ৫ ডিগ্রি পশ্চিমে অবস্থিত স্থানের সময় হবে ১২টা – (৫× 8 ) - মিনিট বা (১২টা ২০ মিনিট) অর্থাৎ ১১টা ৪০ মিনিট।

প্রিনিচ সমন্ধের মাধ্যমে স্থানীয় সময় নির্ণয় : গ্রিনিচের দ্রাঘিমা শূন্য (০) তিনি। এর সঠিক সময় ব্রুনোমিটার ঘড়ি থেকে জানা যার। সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে যেকোনো স্থানের দ্রাঘিমা রে করতে হলে উক্ত স্থানের আকাশে সূর্যের সর্বোচ্চ অবস্থান দেখে ঐ সময়ে উক্ত স্থানে দুপুর ১২টা ধরা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে গ্রিনিচের সময় ও উক্ত স্থানের সময়-এর পার্থক্য থেকে ঐ স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়। কোনো স্থান গ্রিনিচের পূর্বে হলে তার স্থানীয় সময় গ্রিনিচের সময় থেকে বেশি হবে এবং কোনো স্থান পশ্চিমে হলে তার স্থানীয় সময় গ্রিনিচের সময় থেকে কম হবে। 

স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময়
স্থানীয় সময় (Local Time) : প্রতিদিন পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে তার নিজ মেরুরেখার উপর আবর্তিত হচ্ছে। ফলে পূর্ব দিকে অবস্থিত স্থানগুলোতে আগে সূর্যোদয় ঘটে। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে কোনো স্থানে যখন সূর্য ঠিক মাথার উপর আসে বা সর্বোচ্চে অবস্থান করে তখন এ স্থানে মধ্যাহ্ন এবং স্থানীয় ঘড়িতে তখন বেলা ১২টা ধরা হয়। এ মধ্যাহ্ন সময় থেকে দিনের অন্যান্য সময় স্থির করা হয়। একে কোনো স্থানের স্থানীয় সময় বলা হয়। সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যেও স্থানীয় সময় নির্ণয় করা যায়। পৃথিবীর কেন্দ্রে কোণের পরিমাণ ৩৬০ ডিগ্রি। এই ৩৬০ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্ব আবর্তন করতে পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা বা (২৪ × ৬০) = ১,৪৪০ মিনিট সময় লাগে। সুতরাং পৃথিবী ১ ডিগ্রি ঘোরে (১,৪৪০÷৩৬০) = ৪ মিনিট সময়ে অর্থাৎ প্রতি ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট।    

প্রমাণ সময় (Standard Time ) :  : দ্রাঘিমারেখার উপর মধ্যাহ্ন সূর্যের অবস্থানের সময়কালকে দুপুর ১২টা ধরে স্থানীয় সময় নির্ধারণ করলে একই দেশের মধ্যে সময় গণনার বিভ্রাট হয়। সেজন্য প্রত্যেক দেশের একটি প্রমাণ সময় নির্ণয় করা হয়। প্রত্যেক দেশেই সেই দেশের মধ্যভাগের কোনো স্থানের দ্রাঘিমারেখা অনুযায়ী যে সময় নির্ণয় করা হয় সে সময়কে ঐ দেশের প্রমাণ সময় বলে। অনেক বড় দেশ হলে কয়েকটি প্রমাণ সময় থাকে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চারটি এবং কানাডাতে পাঁচটি প্রমাণ সময় রয়েছে। গ্রিনিচের (০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা) স্থানীয় সময়কে সমগ্র পৃথিবীর প্রমাণ সময় হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রমাণ সময় গ্রিনিচের সময় অপেক্ষা ৬ ঘণ্টা অগ্রবর্তী। ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমারেখা বাংলাদেশের প্রায় মধ্যভাগে অবস্থিত। এ কারণে এ দ্রাঘিমার স্থানীয় সময়কে বাংলাদেশের প্রমাণ সময় ধরে কাজ করা হয় ।                                        নিচের উদাহরণ দুটি থেকে দ্রাঘিমা ও সময়ের সম্পর্ক বোঝা যাবে।                                   > ঢাকা ও সিউলের সময়ের ব্যবধান ২ ঘণ্টা ৩২ মিনিট। ঢাকার দ্রাঘিমা ৯০° পূর্ব হলে সিউলের দ্রাঘিমা কত ( সিউল ঢাকার পূর্বে অবস্থিত) ?                                                                 সিউল ঢাকার পূর্বে অবস্থিত হওয়ায় এর দ্রাঘিমা বেশি হবে।                                               ঢাকা ও সিউলের সময়ের ব্যবধান ২ ঘণ্টা ৩২ মিনিট = ১৫২ মিনিট।                                       ৪ মিনিট সময়ের ব্যবধানে দ্রাঘিমার ব্যবধান হয় ১°                                                       সুতরাং, ১ মিনিট সময়ের ব্যবধানে দ্রাঘিমার ব্যবধান হয় 8                                              সুতরাং, ১৫২ মিনিট সময়ের ব্যবধানে দ্রাঘিমার ব্যবধান হয়,(১ × ১৫২/৪)=৩৮ডিগ্রি                    অতএব, সিউলের দ্রাঘিমা ৯০° + ৩৮° = ১২৮°                                                             উত্তর: সিউলের দ্রাঘিমা ১২৮° পূর্ব।                                                                                    • ঢাকা ও চেন্নাইয়ের দ্রাঘিমা যথাক্রমে ৯০° এবং ৮০°১৫’ পূর্ব। ঢাকায় যখন মধ্যাহ্ন চেন্নাইয়ের স্থানীয় সময় তখন কত ? ঢাকা ও চেন্নাইয়ের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য, ১০°-৮০°১৫ ১°৪৫ ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪ মিনিট।                                                     অতএব, ৯° দ্রাঘিমার জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৯০ x ৪ = ৩৬ মিনিট। ১ দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য হয় ৪ সেকেন্ড সুতরাং  ৪৫’ দ্রাঘিমার জন্য সময়ের পার্থক্য হয়   ৪৫’ × ৪” = ১৮০ সেকেন্ড = ৩ মিনিট।                                                                                                   সুতরাং, ৯°৪৫ দ্রাঘিমার জন্য মোট সময়ের পার্থক্য হয় ৩৬ মিনিট + ৩ মিনিট = ৩১ মিনিট। চেন্নাই ঢাকার পশ্চিমে অবস্থিত। চেন্নাইয়ের দ্রাঘিমা কম। সেজন্য চেন্নাইয়ের সময়ও কম।  সুতরাং, ঢাকায় যখন মধ্যাহ্ন অর্থাৎ দুপুর ১২টা তখন চেন্নাইয়ের স্থানীয় সময় হবে, ১২টা ৩৯ মিনিট = সকাল ১১টা ২১ মিনিট।                                                                                            উত্তর: চেন্নাইয়ের স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২১ মিনিট।      

প্রতিপাদ স্থান (Antipode) : ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থিত কোনো বিন্দুর বিপরীত বিন্দুকে সেই বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান বলে। প্রতিপাদ স্থান সম্পূর্ণভাবে একে অন্যের বিপরীত দিকে থাকে। প্রতিপাদ স্থান নির্ণয় করার জন্য ভূপৃষ্ঠের কোনো বিন্দু থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ঠিক বিপরীত দিকে একটি কল্পিত রেখা টানা হয়। ঐ কল্পিত রেখা যে বিন্দুতে ভূপৃষ্ঠের বিপরীত পাশে এসে পৌঁছায় সেই বিন্দুই পূর্ব বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান চিত্র ৩.৩ ক স্থানের প্রতিপাদ স্থান খ আর চ স্থানের প্রতিপাদ স্থান ছ। কোনো স্থানের অক্ষাংশ জানা থাকলে তার প্রতিপাদ স্থানেরও অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। কোনো স্থানের অক্ষাংশ যত ডিগ্রি, এর প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ তত ডিগ্রি হবে। স্থান দুটি একটি নিরক্ষরেখার উত্তরে ও অপরটি দক্ষিণে অবস্থিত হবে। দুটি স্থান দুই গোলার্ধে হবে। একটি স্থানের অক্ষাংশ ৭০ ডিগ্রি উত্তর হলে তার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণ হবে। কোনো স্থানের দ্রাঘিমা এবং এর প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা যোগ করলে ১৮০ ডিগ্রি হবে। সুতরাং, ১৮০ ডিগ্রি থেকে এক স্থানের দ্রাঘিমা বাদ দিলে এর প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা পাওয়া যায়। এক স্থানের দ্রাঘিমা পূর্ব হলে এর প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা পশ্চিমে হবে। যেমন, ৪০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত স্থানের প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা হবে ১৮০–৪০ ডিগ্রি = ১৪০ ডিগ্রি পশ্চিম। স্থান দুটির মধ্যে সময়ের পার্থক্য হবে ১২ ঘণ্টা। চিত্রে চ বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান ছ বিন্দু (চিত্র দেখ)। ঢাকার প্রতিপাদ স্থান দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্গত চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। 

আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (International Date Line)                                                      কোনো নির্দিষ্ট স্থান থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে দীর্ঘপথ ভ্রমণ করার সময় স্থানীয় সময়ের পার্থক্যের সঙ্গে সঙ্গে সপ্তাহের দিন বা বার নিয়েও গরমিল হয়। কোনো নির্দিষ্ট স্থান থেকে পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করলে সময় নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখাকে অবলম্বন করে সম্পূর্ণভাবে জলভাগের উপর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত একটি রেখা কল্পনা করা হয়। এ কল্পিত রেখাটিকে 'আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা' বলে। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার প্রয়োজনীয়তা : আমরা জানি, ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমান্তরে ৪ মিনিট সময়ের ব্যবধান হয়। সুতরাং ১৫ ডিগ্রি দ্রাঘিমান্তরে সময়ের ব্যবধান হবে ১ ঘন্টা। এভাবে মূল মধ্যরেখা (গ্রিনিচের দ্রাঘিমা থেকে পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকলে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় ১২ ঘন্টা সময় বেশি হয় এবং পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলে ১২ ঘন্টা সময় কম হয়। সুতরাং, মূল মধ্যরেখায় যখন সোমবার সকাল ১০টা তখন ১৮০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১০টা।  এভাবে আবার ঠিক পশ্চিম দিক দিয়ে দ্রাঘিমা গণনা করলে ১৮০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমায় স্থানীয় সময় হবে তার পূর্ব দিন অর্থাৎ রবিবার রাত ১০টা। কিন্তু ১৮০ ডিগ্রি পূর্ব ও ১৮০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমা মূলত একই রেখা। সুতরাং, দেখা যায় একই দ্রাঘিমায় স্থানীয় সময়ের পার্থক্য হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা বা একদিন।
একই স্থানে কোথাও রবিবার কোথাও সোমবার। কিন্তু একই দ্রাঘিমারেখায় একই সঙ্গে রবিবার রাত ১০টা ও সোমবার রাত ১০টা হতে পারে না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরের জলভাগের উপর মানচিত্রে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখাকে অবলম্বন করে একটি রেখা কল্পনা করা হয়েছে। এটিই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা। এ রেখা অতিক্রম করলে দিন এবং তারিখের পরিবর্তন হয় বলে এ রেখাটিকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলে (চিত্র ৩.৪ দেখ)। এটি সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশ অ্যালিউসিয়ান, ফিজি ও চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের উপর দিয়ে গিয়েছে। স্থানীয় লোকদের বারের হিসেবে অসুবিধা দূর করার জন্য রেখাটিকে বেরিং প্রণালিতে ১২° পূর্ব, অ্যালিউসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে ৭০° পশ্চিম এবং ফিজি ও চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের কাছে ১১° পূর্ব দিকে বেঁকে জলভাগের উপর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে।

গ্রিনিচ থেকে পূর্বগামী কোনো জাহাজ বা বিমান এ রেখা অতিক্রম করলে স্থানীয় সময়ের সঙ্গে মিল রাখার জন্য তাদের বর্ধিত সময় থেকে একদিন বিয়োগ করে এবং পশ্চিমগামী জাহাজ বা বিমান তাদের কম সময়ের সঙ্গে একদিন যোগ করে তারিখ গণনা করে থাকে।

সময় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কাল্পনিক রেখার ভূমিকা
পৃথিবী প্রায় একটি গোলকের ন্যায়। তাই পৃথিবীর মানচিত্রে সময় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কাল্পনিক রেখার ভূমিকা অপরিসীম। গোলাকার পৃথিবী নিজ অক্ষ বা মেরুরেখায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। ফলে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থান ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূর্যের সামনে উপস্থিত হচ্ছে। যে সময়ে কোনো স্থানের মধ্যরেখা সূর্যের ঠিক সামনে আসে তখন ঐ স্থানে দুপুর হয় এবং ঘড়িতে তখন ১২টা বাজে। দুপুর বা মধ্যাহ্ন অনুসারে অন্যান্য সময় নির্ণয় করা হয়। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে বিধায় পূর্বে অবস্থিত স্থানসমূহে আগে সূর্যোদয় হয়। কোনো স্থানের সময় বেলা ১টা হলে তার ১° পূর্বের স্থানে সময় বেলা ১টা ৪ মিনিট এবং ১° পশ্চিমের স্থানে বেলা ১২টা ৫৬ মিনিট হবে। গ্রিনিচে (০°) যখন সকাল ৮টা, তখন কোনো স্থানে সকাল ১০টা হলে উক্ত স্থানের দ্রাঘিমা হবে ৩০° পূর্ব। আবার সময় গ্রিনিচের চেয়ে কম হলে উক্ত স্থানটি গ্রিনিচের পশ্চিমে অবস্থিত হবে। এভাবে দ্রাঘিমার অবস্থান থেকে সময় ও সময়ের অবস্থান থেকে দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়।

Promotion